আমরা বল কী সেটা বলেছি (যেটা ত্বরণের জন্ম দেয়) সেটা কেমন করে পরিমাপ করতে হয় সেটাও বলেছি (ভর আর ত্বরণের গুণফল) কিন্তু এখনো তোমাদের সত্যিকার কোনো বলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিইনি। পদার্থবিজ্ঞানের একটি চমকপ্রদ বল হচ্ছে মহাকর্ষ বল, ভর আছে সে রকম যেকোনো
বস্তু অন্য বস্তুকে মহাকর্ষ বল দিয়ে আকর্ষণ করে। ধরা যাক, দুটি ভর এবং তাদের মাঝে দূরত্ব r। তাহলে তাদের মাঝে যে বল সৃষ্টি হবে সেটাকে যদি আমরা বলি তাহলে
এখানে G হচ্ছে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক এবং তার মান হচ্ছে:
এখানে মনে রাখতে হবে m1 ভরটি m2 কে নিজের দিকে F বলে আকর্ষণ করে আবার m2 ভরটি m1 কে নিজের দিকে আকর্ষণ করে।
এই দুটো ভরের একটা যদি আমাদের পৃথিবী হয় এবং আমরা যদি ধরে নিই তার ভর M এবং পৃথিবীর উপরে m ভরের অন্য একটা জিনিস রাখা হয় তাহলে পৃথিবী m ভরকে তার কেন্দ্রের দিকে F বলে আকর্ষণ করবে।
এই বলটিই আসলে বস্তুটির ওজন। মনে রাখতে হবে এখানে R পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে m. ভরটি পর্যন্ত দূরত্ব। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে m ভরের দূরত্ব নয়। যেহেতু পৃথিবীর ব্যাসার্ধ অনেক (প্রায় 6000 km) কাজেই পৃথিবীর পৃষ্ঠে ছোটখাটো উচ্চতাকে ধর্তব্যের মাঝে আনার প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্ব মাপা হয় কারণ যদি গোলাকার কোনো বস্তু হয় তাহলে তার সমস্ত ভর কেন্দ্রবিন্দুতে জমা হয়ে আছে ধরে নিলে কোনো ভুল হয় না। (তার কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটা বিন্দুই m ভরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে এবং সবগুলো আকর্ষণ একত্র করা হলে মনে হয় যেন পৃথিবীর সমস্ত ভরটুকুই কেন্দ্রবিন্দুতে জমা হয়ে আছে।)
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের জন্য m ভরটি একটি ত্বরণ অনুভব করবে। মাধ্যাকর্ষণের জন্য যে ত্বরণ হয় সেটাকে a না লিখে লেখা হয় g সেটা আমরা আগেই বলেছি। কাজেই F = ma এর পরিবর্তে লিখতে পারি:
কিংবা,
পৃথিবীর ভর M = , পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R =
আমরা এর আগের অধ্যায়েই গতির সমীকরণে g এর এই মান ব্যবহার করেছি, এখন তোমরা জানতে পারলে কেন g এর এই মান ব্যবহার করা হয়েছিল।
মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই যেকোনো ভর m এর জন্য মাধ্যাকর্ষণ বল বের করতে পারব। সেটি হবে
একটি বস্তুর উপর মাধ্যাকর্ষণজনিত বলটি আসলে বস্তুটির ওজনা কাজেই একটি স্তর ব্যবহার করে আমরা অন্য একটি বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করতে পারি। ছবিতে M স্তর ঝুলিয়ে রাখার জন্য তার উপর মাধ্যাকর্ষণ বল Mg নিচের দিকে কাজ করছে। সেটি একটি কপিকল এবং সুতো দিয়ে টেবিলের উপর রাখা m ভরটির উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী m ভরটির একটি ত্বরণ হবে। অর্থাৎ
এই ত্বরণ ব্যবহার করে আমরা টেবিলের উপর রাখা বস্তুটির গতি বিশ্লেষণ করতে পারব।
আরও দেখুন...